ভারতীয় সংবিধানের মৌলিক অধিকার (Fundamental Rights)

  • ভারতীয় সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ের(PART-III) ১২ - ৩৫ নম্বর ধারায় নাগরিকদের মৌলিক অধিকার বর্ণিত হয়েছে।
  • তৃতীয় অধ্যায়টিকে ভারতীয় সংবিধানের প্রধান সনদ (Magna Carta) বলা হয়।
  • মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান থেকে ভারতীয় সংবিধানের এই অংশটি গৃহীত হয়েছে।
  • মৌলিক অধিকার গুলি আদালত কর্তৃক বলবৎযোগ্য(justiciable) অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যদি মনে করেন যে তাঁর মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে তবে তিনি সুপ্রিম কোর্টের (ধারা ৩২) বা হাইকোর্টের (ধারা ২২৬) দ্বারস্থ হতে পারেন।
  • মূল সংবিধান 1950 সালের 26 শে জানুয়ারি কার্যকরী হওয়ার সময় মৌলিক অধিকার ছিলো 7 টি।কিন্তু 1978 সালে 44 তম সংবিধান সংশোধনীর দ্বারা সম্পত্তির অধিকার বাদ দিয়ে 6 প্রকারের মৌলিক অধিকার স্বীকৃতি দেওয়া হয়।এই সম্পত্তির অধিকার এখন দ্বাদশ অধ্যায়ের অন্তর্গত(PART-XII) Legal Right বা আইনি অধিকার (300(A) হিসেবে স্বীকৃত।
  • ২০০২ সালের ৮৬ তম সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে শিক্ষার অধিকার মৌলিক অধিকারের তালিকার অন্তর্গত হলেও মৌলিক অধিকারে সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকে। কারণ শিক্ষার অধিকার মূল সংবিধানে তৃতীয় অধ্যায়ের(PART-III) রাইট টু লাইফের অন্তর্গত একটি উপধারায় বর্তমান থাকায় নতুন ধারা সংযোজনের প্রয়োজন হয়নি। ৬ প্রকারের মৌলিক অধিকার গুলি হলো-

1. সাম্যের অধিকার (Right to Equality) :-

  • ভারতীয় সংবিধানের তৃতীয় অংশের 14 – 18 নং ধারায় সাম্যের অধিকার বর্ণিত আছে।
  • ১৪ নং ধারা ( Article 14)-ভারতীয় ভূখণ্ডের মধ্যে কোন ব্যক্তিকে রাষ্ট্র, আইনের চোখে সাম্যের অধিকার[Equality before the law] বা আইন কর্তৃক সমভাবে রক্ষিত হওয়ার অধিকার([equal Protection of the laws] থেকে বঞ্চিত করবে না।

    ব্যতিক্রমঃ১৪ নং ধারাটি নিরঙ্কুশ নয়, এর কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে, যেমন- ধারা ৩৬১ [Protection of President and Governors and Rajpramukhs] অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালগণ কিছু বিশেষ সুরক্ষা ভোগ করেন।

    • নিজেদের দায়িত্ব পালন তথা ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালগণ আদালতের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য নন।
    • কার্যকাল (term) চলাকালীন কোন রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপালের বিরুদ্ধে কোন ফৌজদারী কার্যাবলী শুরু করা বা আদালতে কার্যাবলী চালিয়ে যাওয়া যাবে না।
    • কার্যকাল (term) চলাকালীন রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপালের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী বা কারাবাসের কোনও প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে না।
    • দুই মাসের পূর্ব বিজ্ঞপ্তি ছাড়া রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপালের বিরুদ্ধে আদালতে দেওয়ানী কার্যকলাপ শুরু করা যাবে না।
  • ১৫ নং ধারা ( Article 15)-রাষ্ট্র, জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ-জন্মস্থান ইত্যাদির ভিত্তিতে কোনও নাগরিককে অতিরিক্ত সুযোগদান বা কারও প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করবে না। কেবলমাত্র তিনটি ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম রয়েছেঃ
    • নারী ও শিশুদের জন্য রাষ্ট্র বিশেষ ব্যবস্থা করতে পারে।
    • তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য রাষ্ট্র বিশেষ ব্যবস্থা করতে পারে।
    • সামাজিক ও শিক্ষাগতদিক থেকে অনগ্রসর নাগরিকদের উন্নতির জন্য রাষ্ট্র বিশেষ সুযোগ সুবিধা প্রদান করতে পারে।
  • ১৬ নং ধারা ( Article 16)-রাষ্ট্রের অধিন যে কোন দপ্তরে নিয়োগ বা চাকরীর ক্ষেত্রে সকলকে সমান সুযোগ দিতে হবে। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে নিয়োগের জন্য পার্লামেন্ট বসবাসের স্থানকে একটি শর্ত হিসাবে রাখতে পারে। এছাড়াও অনগ্রসর শ্রেণীর জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারে।
  • ১৭ নং ধারা ( Article 17)- ১৭ নং ধারাতে অস্পৃশ্যতা দূরীকরণের কথা বলা হয়েছে।
  • ১৮ নং ধারা ( Article 18)- ১৮ নং ধারাতে খেতাব প্রদান-গ্রহন নিষিদ্ধকরণ করা হয়েছে।

2. স্বাধীনতার অধিকার (Right to Freedom) :-

  • ভারতীয় সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ের ১৯-২২ ধারায় স্বাধীনতার অধিকার উল্লেখিত হয়েছে।
  • ১৯ নং ধারায় মোট ৬ প্রকারের স্বাধীনতার অধিকার বর্ণিত হয়েছে-
    • (ক) বাক স্বাধীনতা ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা বা অধিকার।
    • (খ) শান্তিপূর্ণ, নিরস্ত্র সমবেত হওয়ার অধিকার।
    • (গ) সংঘ ও সমিতি গঠনের অধিকার।
    • (ঘ) ভারতের সর্বত্র স্বাধীন ভাবে চলাফেরার অধিকার।
    • (ঙ) ভারতের সর্বত্র স্বাধীন ভাবে বসবাসের অধিকার।
    • (চ) যেকোনো বৃত্তি,পেশা বা ব্যবসা-বানিজ্য করার অধিকার।
  • ২০ নং ধারা - বিধিবহির্ভূত ও অতিরিক্ত শাস্তিপ্রদান নিষিদ্ধকরণ।
    • কোন অপরাধের জন্য যদি কোন ব্যক্তিকে শাস্তি প্রদান করা হয় তাহলে যে সময় অপরাধ ঘটেছে সেই সময়কার প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
    • কোন ব্যক্তিকে একই অপরাধের জন্য একাধিকবার শাস্তি প্রদান করা যাবে না।
    • অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নিজের বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা যাবে না।
  • ২১ নং ধারা - জীবন ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অধিকার সংরক্ষণ।
  • ২১-A নং ধারা - শিক্ষার অধিকার- ২০০২ সালে ৮৬তম সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে এই ধারাটি সংযোজিত হয়। এই অংশটি প্রথমে সংবিধানের চতুর্থ অধ্যায়ের ৪৫ নং ধারায় উল্লিখিত ছিল। এই ধারা অনুসারে রাষ্ট্র ৬-১৪ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতিটি শিশুর জন্য জন্য অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষার ব্যবস্থা করবে। পার্লামেন্ট অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষার অধিকার আইন ২০০৯ বলবৎ করে।
  • ২২ নং ধারা - গ্রেপ্তার ও আটক হওয়া ব্যক্তিদের অধিকার।
    • যুক্তিসঙ্গত কারণ না দেখিয়ে বা না জানিয়ে কোন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার বা আটক করা যায় না।
    • গ্রেপ্তার করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিকটবর্তী ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে ঐ ব্যক্তিকে হাজির করাতে হয়।
    • আদালতের আদেশ ছাড়া ঐ ব্যক্তিকে অতিরিক্ত সময়ের জন্য আটক করে রাখা যায় নয়া।
    • আটক ব্যক্তিকে উকিলের মাধ্যমে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হয়।

3. শোষণের বিরুদ্ধে অধিকার (Right against Exploitation):-

  • ভারতীয় সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ের ২৩ – ২৪ অনুচ্ছেদ বা ধারায় শোষণের বিরুদ্ধে অধিকার উল্লেখিত হয়েছে।
  • ২৩ নং ধারা- বিনা পারিশ্রমিকে শ্রমদানে বাধ্য করা নিষিদ্ধ এবং মানুষ ক্রয় বিক্রয় নিষিদ্ধ।
  • ২৪ নং ধারা- ১৪ বছরের কম বয়সের শিশুদের কারখানা বা খনি বা অন্যান্য কাজে লাগানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

4. ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার (Right to Freedom of Religion):-

  • ভারতীয় সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ের ২৫ – ২৮ নং অনুচ্ছেদে ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার বর্ণিত হয়েছে।
  • ২৫ নং ধারা- প্রতিটি মানুষকে তার নিজস্ব ধর্ম বিশ্বাসকে স্বীকার করার, ধর্মীয় আচার-আচরণ পালন ও ধর্ম প্রচার করার স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।
  • ২৬ নং ধারা- প্রতিটি ধর্মীয় সম্প্রদায়কে ধর্মীয় কার্যাবলী পরিচালনার স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।
  • ২৭ নং ধারা- ধর্মের প্রচারের উদ্দেশ্যে কোনও সম্প্রদায় বা ব্যক্তিকে কর প্রদানে বাধ্য করা যাবে না।
  • ২৮ নং ধারা- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মশিক্ষাদান নিষিদ্ধকরণ।
    • পুরোপুরি সরকারী অর্থে পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মশিক্ষা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
    • সরকার কর্তৃক স্বীকৃত বা সরকারী অর্থে আংশিকভাবে পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মশিক্ষা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ নয়। প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার্থীদের নিজেদের এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে অভিভাবকদের সম্মতি প্রয়োজন।
    • সম্পূর্ণ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মশিক্ষা দান সম্পর্কে কোনও বাধানিষেধ আরোপ করা হয় নি।

5. সংস্কৃতি এবং শিক্ষা বিষয়ক অধিকার (Cultural and Educational Right) :-

  • ভারতীয় সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ের ২৯-৩০ নং ধারায় সংস্কৃতি এবং শিক্ষা বিষয়ক অধিকার বর্ণিত হয়েছে।
  • ২৯ নং ধারা অনুসারে ভারতবর্ষের যেকোন অংশে বসবাসকারী নাগরিক তার ভাষা, লিপি ও সংস্কৃতি সংরক্ষণের অধিকার ভোগ করবেন।
  • ৩০ নং ধারা অনুসারে ধর্মীয় ও ভাষাগত উভয় প্রকার সংখ্যালঘুদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পরিচালন করার অধিকার প্রদান করা হয়েছে।

6. সাংবিধানিক প্রতিকারের অধিকার (Right to Constitutional Remedies):-

  • ভারতীয় সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ের 32 ধারায় সাংবিধানিক প্রতিকারের অধিকার বর্ণিত হয়েছে। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যদি মনে করেন যে তাঁর মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে তবে তিনি সুপ্রিম কোর্টের (ধারা ৩২) বা হাইকোর্টের (ধারা ২২৬) দ্বারস্থ হতে পারেন।
  • 32 নং ধরা অনুসারে সুপ্রিম কোর্ট এবং 226 নং ধরা অনুসারে হাইকোর্ট মৌলিক অধিকার বলবৎ করার জন্য লেখ (Writ), নির্দেশ (Direction) বা আদেশ (Order) জারি করতে পারেন।
  • 32 নং ধারাকে ভারতীয় সংবিধানের জনক ডঃ বি. আর. আম্বেদকর “হৃদয় এবং আত্মা” বা "Soul of the Constitution and very heart of it"- বলে উল্লেখিত করেছেন।

অন্যান্য ধারাঃ

১২ নং ধারা(Article 12) 'রাষ্ট্র' বা 'State' কথাটির অর্থ বা ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে। রাষ্ট্র বলতে বোঝানো হয়েছে-

  • ভারত সরকার এবং ভারতীয় সংসদ [Indian Government and Indian Parliament – Lok Sabha, Rajya Sabha]
  • রাজ্য সরকারের আইন প্রণয়নকারী ও শাসনকারী অংশ[Legislative and Executive organs of the State Government]
  • সমস্ত স্থানীয় কর্তৃপক্ষ [All local authorities]-পুরসভা, পঞ্চায়েত বা জেলা বোর্ড।
  • অন্যান্য সংবিধিবদ্ধ(statutory:জাতীয় মানবাধিকার কমিশন [NHRCM], জাতীয় মহিলা কমিশন [National Commission for Women]ইত্যাদি ) ও অসংবিধিবদ্ধ(non-statutory : CBI, Lokpal and Lokayuktas ইত্যাদি ) কর্তৃপক্ষ।

১৩ নং ধারা(Article 13)মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বা তার বিরোধী ভাবে নির্মিত কোন আইনের অস্তিত্ব থাকবে না। যদি কোন সাংবিধানিক সংশোধন মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে বা বিরোধিতা করে, তবে সেই সংশোধনটি অবৈধ(Void) ঘোষণা করা যেতে পারে।

৩১ নং ধারা(Article 31)৪৪ তম সংবিধান সংশোধনী আইন, ১৯৭৮ -এর মাধ্যমে বাদ দেওয়া হয়েছে।

৩৩ নং ধারা(Article 33)সশস্ত্র বাহিনী, আধা সামরিক বাহিনী, পুলিশ বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা ও অন্যান্য সমতুল্য বাহিনীর সদস্যদের মৌলিক অধিকারের ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপ করা বা অধিকারগুলি উচ্ছেদ করার ক্ষমতা সংসদকে দেওয়া হয়েছে।

৩৪ নং ধারা(Article 34)কোন অঞ্চলে সেনাবাহিনীর শাসন চলাকালীন অবস্থায় মৌলিক অধিকারগুলির উপর নানা সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়।

৩৫ নং ধারা(Article 35)কিছু নির্দিষ্ট মৌলিক অধিকারগুলি বলবৎ করার জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নের ক্ষমতা কেবলমাত্র পার্লামেন্টকে দেওয়া হয়েছে, রাজ্য আইন সভা গুলিকে নয়। এর মাধ্যমে সারা দেশের নাগরিকরা সমানভাবে তাদের মৌলিক অধিকারগুলি ভোগ করতে পারেন।

৩৫(A) নং ধারা(Article 35(A))"সনস অফ দা সয়েল"-এর অধিকার রক্ষার মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীরের স্থায়ী বাসিন্দাদের বাড়তি সুবিধা ও অধিকার দেওয়া হয়।

মৌলিক অধিকারের উপর স্থগিতাদেশ

মন্ত্রীসভার অনুমোদনক্রমে রাষ্ট্রপতি মৌলিক অধিকারগুলি স্থগিত রাখতে পারেন নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে-

  • যুদ্ধ বা বহিরাক্রমণের কারনে ৩৫২ নং ধারা অনুসারে রাষ্ট্রপতি জাতীয় জরুরী অবস্থা ঘোষণা করলে ১৯ নং ধারার অন্তর্গত স্বাধীনতার অধিকারগুলি অকার্যকর হয়।
  • ৩৫৯ নং ধারা অনুসারে একটি পৃথক ঘোষণার মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি ১৯ নং ধারা ব্যতিত অন্যান্য সকল অধিকার গুলিকে (২০ ও ২১ নং ধারা বাদে) স্থগিত রাখতে পারেন।
  • ৪৪ তম সংশোধনী আইনের মাধ্যমে বলা হয়েছে যে, কোন অবস্থাতেই ২০ ০ ২১ নং ধারাকে স্থগিত করে রাখা যাবে না।

রিট(Writ) বা লেখ

ভারতীয় সংবিধান অনুসারে ভারতীয় নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলি রক্ষার দায়িত্ত্ব ন্যস্ত হয়েছে দেশের বিচারব্যবস্থার উপর। কোন ব্যক্তি যদি মনে করেন যে তাঁর মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে তবে তিনি সুপ্রিম কোর্টের (ধারা ৩২) বা হাইকোর্টের (ধারা ২২৬) দ্বারস্থ হতে পারেন। মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্ট পাঁচ ধরনের রিট বা লেখ জারি করতে পারে। এগুলি হল-

1. বন্দী প্রত্যক্ষীকরন[Habeas Corpus/হ্যাবিয়াস করপাস]-এটি একটি ল্যাটিন শব্দ যার অর্থ "সশরীরে হাজির করা" ("to have the body")। কোনও বিশেষ কারনে যদি কোন কর্তৃপক্ষ কোন ব্যক্তিকে আটক করে তাহলে আদালত এই রিটের মাধ্যমে আটককারী কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয় আটক ব্যক্তিকে অবিলম্বে আদালতে হাজির করতে। আটক বিধিসম্মত না হলে আদালত আটক ব্যক্তিকে মুক্তির নির্দেশ দেয়।

2. পরমাদেশ[Mandamas/ম্যান্ডেমাস]-এর অর্থ 'We Command'। আদালত এই রিটের মাধ্যমে সরকার, সরকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে তার আইনানুগ কর্তব্যপালনের নির্দেশ দেয়। রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপাল ছাড়া বিচারবিভাগীয় এবং প্রশাসনিক উভয় প্রকার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেই এই রিট জারি করা যায়।

3. প্রতিষেধ[Prohibition]-এর অর্থ হল "নিষেধ করা"। এই রিটের মাধ্যমে ঊর্দ্ধতন আদালত নিম্নতন আদালতকে তার এক্তিয়ার বহির্ভূত কার্য সম্পাদনে থেকে বিরত থাকার নির্দেশ প্রদান করে। এই লেখটি কেবলমাত্র বিচারবিভাগীয় বা আধা বিচারবিভাগীয় কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্যে জারি করা যায়। প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ, আইন নির্মাণকারী সংস্থা, কোন একক ব্যক্তি বা সংস্থার বিরুদ্ধে এই লেখ জারি করা যায় না।

4. উৎপ্রেষণ[Certiorari]- কথাটির অর্থ "বিশেষভাবে জ্ঞাত হওয়া"(to be certified)। নিম্নতন আদালত যদি কোন মামলায় এক্তিয়ার বহির্ভূত কার্য সম্পাদন করে বা আইনের ভূল ব্যাখ্যা দান করে তাহলে সেক্ষেত্রে ঊর্দ্ধতন আদালত এই রিট জারি করার মাধ্যমে মামলার রায় খারিজ করতে পারে বা মামলাটিকে ঊর্দ্ধতন আদালতে প্রেরণ করার নির্দেশ দিতে পারে।

অধিকার পৃচ্ছা[Quo-warranto]-কথাটির অর্থ 'কোন অধিকারে' (by what authority or warrant)। কোন ব্যক্তি আইনসঙ্গতভাবে কোন বিশেষ পদে নিযুক্ত না হয়েও যদি সেই পদ দাবী করেন তাহলে তার দাবির বৈধতা বিচারের জন্য এই লেখ জারি করা হয়। দাবী আইনসঙ্গত না হলে ঐ ব্যক্তিকে পদচ্যুত করা হয়।